নিবন্ধন পেতে কঠিন শর্তের মুখে এনসিপি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অগ্রভাগে থাকা একঝাঁক উদ্যমী তরুণ-তরুণীর নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। নতুন এ দলটিকে ঘিরে রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। দলটি এমন এক সময় আত্মপ্রকাশ করেছে, যখন আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দলটির আত্মপ্রকাশের পর রাজনীতিতে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলোড়ন সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজেদের সময়োপযোগী কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া। অবশ্য নির্বাচনে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন ছাত্রনেতারা। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে চিন্তা করছেন তারা।

তবে নিবন্ধন পেতে কঠিন শর্তের মুখে পড়বে এনসিপি। কারণ নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিবন্ধন পাওয়া অনেকটা কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং একটি প্রক্রিয়া। বর্তমানে নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন শর্ত মানতে হয়, যা অনেক সময় বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য যে শর্তগুলো আরোপ করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো, একটি নতুন দলকে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত যেকোনো একটি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হতে হবে। যদিও এই শর্তটি কাগজে-কলমে রয়েছে, বাস্তবিকভাবে এটি কার্যকর নয় এবং এটি এখন অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছিল, তবে বর্তমানে শর্তগুলো আরও কঠিন হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য ন্যূনতম ২১টি জেলা ও ১০০টি উপজেলায় কমিটি এবং কার্যালয় স্থাপন করতে হবে এবং প্রতিটি উপজেলায় অন্তত ২০০ জন ভোটারকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সদস্য সংগ্রহ, জেলা এবং উপজেলায় কমিটি স্থাপন করা এবং কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আত্মবিশ্বাসী, দলটি শিগগিরই এসব কার্যক্রম শুরু করবে এবং নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হবে। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমরা নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত শর্তগুলো পূরণ করতে সক্ষম হব। আমাদের এক-তৃতীয়াংশ জেলায় কমিটি থাকতে হবে, ১০০টির বেশি উপজেলা কমিটি থাকতে হবে এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। আমরা এই সমস্ত কাজ সময়মতো সম্পন্ন করতে পারব।’
এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলিম জানান, বর্তমানে নিবন্ধনের যে শর্ত রয়েছে, সেগুলো শিথিল করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ১০% জেলা এবং ৫% উপজেলায় কমিটি ও কার্যালয় থাকলে এবং সর্বনিম্ন ৫০০০ সদস্য থাকলে তাদের নিবন্ধন দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করছি।’ নির্বাচন কমিশন আশাবাদী, এ বছরের মধ্যে নিবন্ধনের শর্তে সংশোধন করা হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না হলেও নির্বাচন কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তাই নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের জন্য তাদের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। অক্টোবরে তফসিল হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here