জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ২৩তম দিনের সংলাপে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) জাতীয় দল ও এনসিপির প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে দিন শেষে একে অপরের প্রতি দুঃখপ্রকাশ এবং কোলাকুলির মধ্য দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা হয়।
দুপুরে মধ্যাহ্নবিরতির আগে উচ্চকক্ষ ও সংবিধান সংশোধনের বিষয় নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা চাই না সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা উচ্চকক্ষের হাতে থাকুক। পৃথিবীর কোনো দেশে অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে এমন ক্ষমতা নেই।”
তার বক্তব্যের জবাবে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “ভোটের ভিত্তিতে যদি উচ্চকক্ষ গঠিত হয়, তবে সেটি জনগণের প্রতিনিধিত্বই করবে।” এ বক্তব্যের পর সালাহউদ্দিন ব্যাখ্যা দিলেও, বিতর্ক তীব্র হয়ে ওঠে সৈয়দ এহসানুল হুদার মন্তব্যে।
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, মাইক ছাড়া জাবেদ রাসিনকে উদ্দেশ করে বলেন, “২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?” তার এই মন্তব্যে জাবেদ রাসিন প্রতিবাদ করেন, এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ তখন হস্তক্ষেপ করে বলেন, “এই মঞ্চে কার লোকাস স্ট্যান্ডিং আছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। আজ যদি একজন প্রশ্ন করেন, কাল তাকে নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে— এতে আলোচনা ব্যাহত হবে।”
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “হুদা সাহেব এই বক্তব্য দিতে পারেন না।” তার প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ তাকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন।
আখতার হোসেন বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা মাঠে নেমেছিল, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত হয়নি। এ বিষয়ে হুদা সাহেবের ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
আলোচনার একপর্যায়ে সালাহউদ্দিন আহমদ হুদাকে বলেন, “আপনি যদি দুঃখ প্রকাশ করেন, ভালো হয়।”
তখন হুদা মাইক নিয়ে বলেন, “আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল ২০২৩ সালে উচ্চকক্ষ নিয়ে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন এনসিপির অবস্থান কোথায় ছিল তা জানতে চাওয়া। তবুও যদি কারো মনে কষ্ট লেগে থাকে, আমি দুঃখিত।”
এই বক্তব্যের পর ড. আলী রীয়াজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঘোষণা দেন। বিরতির সময় হুদাকে এনসিপির আখতার হোসেনের সঙ্গে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, “আমার বক্তব্যে কাউকে কষ্ট দেয়ার ইচ্ছে ছিল না। অনুরোধ করব, এটা নিয়ে যেন আর ভুল বোঝাবুঝি না হয়।”
পরে আখতার হোসেন নিজেই হুদাকে জাবেদ রাসিনের সঙ্গে কোলাকুলি করিয়ে দেন, এবং পরিবেশ শান্ত হয়।