আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আরও একজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। টানা পাঁচদিনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে প্রসিকিউশন তাদের যুক্তি উপসংহারে নিয়ে আসে এবং অভিযুক্তদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতের সামনে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন। একজন মানুষকে হত্যার দায়ে যদি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে ১ হাজার ৪০০ হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে ১৪শ বার ফাঁসি দেওয়া উচিত। যদিও আইনে তা সম্ভব নয়, তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের জনগণ এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেতে চায়। এত প্রাণহানির দায় কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। যারা ক্ষমতায় থেকে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করেছেন, তাদের প্রতি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন।”
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ প্যানেলের সামনে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। বিচারপতি মজুমদার ছাড়াও এই বেঞ্চে সদস্য ছিলেন বিচারপতি শেখ রেজাউল করিম এবং বিচারপতি হাসনাত রেজা।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা পরিকল্পিতভাবে দমননীতি চালায়, যার ফলে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ নিহত হয়। এতে রাজনৈতিক বিরোধীদের পাশাপাশি ছাত্র-জনতা, শ্রমজীবী ও সাংবাদিকরাও প্রাণ হারান।
তাজুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে সেই অপরাধের দায় কেবল নিচের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল সেই সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তাদের নির্দেশেই রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে।”
একইসঙ্গে মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আদালতের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেন প্রধান প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, “তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে কিছু সহযোগিতা করেছেন, তাই তার বিষয়ে আদালত যা উপযুক্ত মনে করবেন, সেটিই প্রযোজ্য হবে।”
প্রসিকিউশনের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর আদালত জানায়, আগামী শুনানিতে আসামিপক্ষ তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। এরপর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
এই মামলার শুনানি ঘিরে আদালতপাড়ায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মী, আইনজীবী ও সাধারণ দর্শকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, এই মামলার রায় বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করবে বলে তারা আশা করছে।


