আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে আইনগত বাধা দূর হয়েছে। এতদিন পুলিশ দলটির মিছিল, সমাবেশ কিংবা গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের গ্রেপ্তারে দ্বিধায় থাকলেও এখন আর কোনো আইনি সংশয়ের মুখে পড়তে হবে না। সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশ এখন দলটির যেকোনো প্রকাশ্য কিংবা গোপন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এ নিষেধাজ্ঞা শুধু মাঠপর্যায়ে নয়, সম্প্রসারিত হয়েছে অনলাইনেও। এখন থেকে কেউ ফেসবুক বা ইউটিউবসহ ডিজিটাল মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বললেও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এমনকি বিদেশে বসে দলটির পক্ষে পোস্ট বা মন্তব্য করলেও তাদের শনাক্ত করে মামলা দায়ের করা হবে, এবং দেশে এলে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আজ সোমবার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার কথা রয়েছে। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরই মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠাবে পুলিশ সদর দপ্তর। সরকারের আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হবে।

একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে দলটি এখনো ‘নিষিদ্ধ’ নয়, বাস্তবে তার কার্যক্রম ও উপস্থিতি নিষিদ্ধ সংগঠনের মতোই বিবেচিত হচ্ছে। এ কারণে এখন থেকে পুলিশ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারবে।

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “পুলিশ আইন অনুযায়ী কাজ করছে। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সরকারের যে সিদ্ধান্ত থাকবে, সেটিই অনুসরণ করবে পুলিশ।”

এতদিন আওয়ামী লীগের পক্ষে ডিজিটাল মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি বা প্রচারে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে এখন থেকে সাইবার স্পেসে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট যেকোনো কার্যক্রমে আইন প্রয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পুলিশ জানায়, কোনো পোস্টে মন্তব্য বা শেয়ার করেও কেউ গুজব বা প্রচার চালালে তাকে সাইবার নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়া হবে।

বিদেশে বসে যারা এমন কার্যক্রম চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার মনে করছে, এমন কার্যকলাপ সরকারি নির্দেশ অমান্য করার শামিল।

সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেন, “যদি কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ না হয় এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ না থাকে, তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করা যায় না। তবে বর্তমানে জারি করা আদেশ অনুযায়ী পুলিশ এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানান, দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী সরকার কোনো কর্ম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলে, তা অমান্যকারীকে গ্রেপ্তার করে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে।

এদিকে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সব অনলাইন পেজ ও কার্যক্রম বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) পদক্ষেপ নিচ্ছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, দলটি এখন আর অফলাইন বা অনলাইনে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে মেটা এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চিঠি পাঠিয়ে ফেসবুক পেজসহ সব অনলাইন উপস্থিতি নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামের দলটির একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে, যার অনুসারী প্রায় ৪০ লাখ। এই পেজটিও নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

এই পদক্ষেপের ফলে রাজনৈতিক পরিসরে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ও প্রচার কার্যক্রমে বড় ধরনের বাঁধা তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।