হাতে-নাতে ধরা পড়লো অনিয়ম ও দুর্নীতি
যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উদঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোগী সেজে পরিচালিত এই অভিযানে ধরা পড়ে খাবার সরবরাহে অনিয়ম, অতিরিক্ত ভাড়া দাবি, নিম্নমানের খাদ্য, এবং চিকিৎসা সেবায় চরম বিশৃঙ্খলা।
“ওসব সরকারি নিয়ম এখানে চলে না!” — দুদকের ফাঁদে ধরা এ্যাম্বুলেন্স চালক
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের টিম ছদ্মবেশে রোগী সেজে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে গেলে চালক এখলাস স্পষ্ট জানিয়ে দেন,
> “ওসব সরকারি নিয়ম এখানে চলে না, যা ভাড়া চেয়েছি তাই দিতে হবে।”
সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হাতে পেয়েছে দুদক।
রোগীদের জন্য বরাদ্দের অর্ধেক খাবার, নিম্নমানের চাল-ডাল
অভিযানে দেখা গেছে, রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারের বড় অংশ তারা পাচ্ছেন না।
পাউরুটি: বরাদ্দ ১৫২ গ্রাম, দেওয়া হয় মাত্র ৫৬ গ্রাম।
মাছ: ১১৮ গ্রামের পরিবর্তে দেওয়া হয় ৬০–৮০ গ্রাম টুকরো।
ডাল ও চাল: ১৪০ টাকা দরের চিকন মসুরের বদলে দেওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা দরের মোটা ডাল।
চাল ও লবণ: নিম্নমানের ও প্রায় অখাদ্য।
রোগীরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুত থাকলেও বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা হয় তাদের।
টয়লেট-ওয়াশরুমের চিত্র “বর্ণনাতীত”
অভিযান টিম ওয়াশরুমগুলো পরিদর্শনে গিয়ে বেহাল অবস্থা দেখতে পান। ময়লা, দুর্গন্ধ আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।
চিকিৎসায় বিশৃঙ্খলা: চিকিৎসক নেই, স্যাকমো দিয়ে চলছে সেবা
জরুরি বিভাগে কোনো ডিগ্রিধারী চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন মাসুদুর রহমান নামে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো)।
এমনকি আউটসোর্সিং কর্মচারী হাবিবুল্লাহ বিল্লাহীর মাধ্যমে রোগীদের কাটা-সেলাইয়ের কাজ করানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে।
দুদকের অভিযানে আটক দালাল
অভিযানকালে নয়ন হোসেন নামে এক দালালকে আটক করা হয়। তিনি নিজেকে নিকটবর্তী একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার দাবি করেন। রোগীদের পরীক্ষার জন্য বাইরের ল্যাবে পাঠাতে যোগসাজশের প্রমাণও মেলে।
“১২ বছর আগের দামেই খাবার দিচ্ছি” — ঠিকাদারের অজুহাত
খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার ইসমাইল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,
“১২ বছর আগের মূল্য তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করছি। সেই দামে মানসম্মত খাবার দেওয়া সম্ভব না। মামলা-ঝামেলার ভয়ে সরবরাহ বন্ধও করতে পারছি না।”
অভিযানের নেতৃত্বে দুদক কর্মকর্তা চিরঞ্জীব নিয়োগী
অভিযান শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুদকের ডিএডি চিরঞ্জীব নিয়োগী এসব অনিয়মের বিস্তারিত তুলে ধরেন। উপস্থিত ছিলেন ডিএডি তৌহিদুল ইসলাম ও এএসআই রমেচা খাতুন।
“ব্যবস্থা নেওয়া হবে” — স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফয়েজ আহমদ ফয়সল বলেন,
> “অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অপরদিকে, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা জানান,
> “তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”


