ভুয়া চিকিৎসক-নার্স, চুরি, নিম্নমানের খাবার—সব মিলিয়ে বিশৃঙ্খলার চিত্র
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চরম বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চুরি, ভুয়া চিকিৎসক ও নার্সের অবাধ বিচরণ, নিম্নমানের খাবার ও সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতালে নারী চোর আটক
রবিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের সামনে থেকে জান্নাত (২১) নামে এক নারী চোরকে হাতে-নাতে আটক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সোহেল রানা।
তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় তিনটি চুরি হওয়া ব্যাগ ও নগদ দুই হাজার একশত চার টাকা।
পুলিশ জানায়, জান্নাত বগুড়া জেলার গাবতলীর বাসিন্দা হলেও বর্তমানে যশোরের রূপদিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চুরির কথা স্বীকার করেছেন। পরে তাকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়।
ছয় মাসে ধরা পড়েছে ভুয়া চিকিৎসক ও নারী চোর
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে অন্তত তিনজন নারী চোর, একজন ভুয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং একজন ভুয়া নার্সকে আটক করা হয়েছে।
তবে সবাই মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
‘কে আসল স্টাফ, কে চোর—বোঝা দায়’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার বিপরীতে এখানে রোগীর চাপ প্রায় দ্বিগুণ।
‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক, আউটসোর্সিং কর্মচারী ও ক্লিনিক–ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজনের অবাধ চলাচলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ—
“কে আসল স্টাফ আর কে চোর, এখন বোঝাই মুশকিল!”
দুদকের অভিযানে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ চিত্র
রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর যশোর জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিন।
অভিযানে ধরা পড়ে—
- রান্নাঘরে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ,
- ভাত ও ডিমের পরিমাণ কম দেওয়া,
- নিম্নমানের চাল ও লবণ ব্যবহার,
- মজুত থাকা ১৬০ পিস স্যালাইন রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করা,
- প্লাস্টার রুমে অনুমোদনহীন লোকজনের ঘুষ বাণিজ্য।
রোগীদের ক্ষোভ
ইনতাজ মণ্ডল (৬৫) নামে এক রোগী বলেন,
“সরকার খাবার দেয়, কিন্তু ঠিক মতো পাই না। ভাত কম, ডিম ছোট, তরকারিও নিম্নমানের।”
খড়কি এলাকার রাজিয়া সুলতানার বোন তানিয়া বলেন,
“স্যালাইন থাকলেও আমাদের দোকান থেকে কিনতে হয়। গরিব মানুষের জন্য এটা কষ্টকর।”
আরেক রোগী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন,
“বাইরের লোকজন টাকা না দিলে প্লাস্টার ঠিকভাবে করে না।”
দুদকের কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়কের বক্তব্য
দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন,
“খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। বিশেষ করে প্লাস্টার রুম ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে অনিয়ম অগ্রহণযোগ্য।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হোসাইন শাফায়াত বলেন,
“দুদকের অভিযানে যে অনিয়ম ধরা পড়েছে, তা গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নতুন ভবন চালু হলে পরিস্থিতি উন্নতির আশা
চিকিৎসকদের মতে, যশোর মেডিকেল কলেজের জন্য নতুন হাসপাতাল ভবন চালু হলে বর্তমান ২৫০ শয্যার ওপর চাপ অনেকাংশে কমবে।
তাতে সেবা ও শৃঙ্খলায় কিছুটা উন্নতি ঘটতে পারে।


