Friday, November 14, 2025
No menu items!
Homeযশোরযশোরে চিকিৎসা সাফল্যের নীরব বিপ্লবী — ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু

যশোরে চিকিৎসা সাফল্যের নীরব বিপ্লবী — ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু

পাইলস ক্লিনিক থেকে ক্যান্সার সার্জারি—এক তরুণ চিকিৎসকের অসাধারণ পথচলা

🏥 চিকিৎসা মানবতার নতুন প্রতীক

যশোর মেডিকেল কলেজ (যমেক) ও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এক তরুণ চিকিৎসক বদলে দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবার চিত্র।
তিনি হলেন ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু, কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
পাইলস, এনাল ফিশার, ফিস্টুলা, মলদ্বার ক্যান্সার এবং ল্যাপারোস্কপিক সার্জারিতে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।

তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় যশোরে সরকারি পর্যায়ে শুরু হয়েছে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি ও আধুনিক পাইলস চিকিৎসা সেবা—যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক নতুন দিগন্ত খুলেছে।

🔹 পাইলস ক্লিনিক: সরকারি সেবায় নতুন অধ্যায়

২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় সরকারি পাইলস ক্লিনিক।
প্রতি মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসা দেন ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু।

এখন খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন বিনামূল্যে ও সর্বাধুনিক পাইলস চিকিৎসা সেবা।

প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী ওষুধেই সুস্থ হয়ে ওঠেন, বাকি  মাত্র ২০ শতাংশ রোগীর প্রয়োজন হয় অপারেশনের।

🔹 যশোরে প্রথম ল্যাপারোস্কপিক মলাশয় ক্যান্সার সার্জারি

২০২৪ সালের ২১ মার্চ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো ল্যাপারোস্কপিক মেশিনের সাহায্যে মলাশয় ক্যান্সারের সফল অস্ত্রোপচার করেন ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু।

রোগী সেলিম মোল্যা, সদর উপজেলার হৈবতপুর গ্রামের বাসিন্দা।
বেসরকারি হাসপাতালে এই অপারেশনে খরচ হতো প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা, কিন্তু সরকারি হাসপাতালে তা বিনামূল্যে সম্পন্ন হয়।

রোগীর ছেলে ইশারত আলী বলেন,

> “ডা. পান্নু এমন একজন চিকিৎসক, যিনি কেবল রোগ সারান না—মানুষের জীবনে আলো ফিরিয়ে দেন। আমাদের পরিবারের প্রতি তিনি অপরিসীম মানবিকতা দেখিয়েছেন।”


🔹 গর্ভে সন্তান রেখেই অ্যাপেন্ডিক্স অস্ত্রোপচারে চিকিৎসা চমক

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল যশোর শহরে ঘটে চিকিৎসা ইতিহাসের এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।

হুসাইন আহমেদের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আফরোজা খাতুন (৩৩) তীব্র পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন। কয়েকজন ডাক্তারকে দেখানোর পর তারা এই ধরনের অপারেশনের ঝুঁকি নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ডা. পান্নু পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, তার অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে গর্ভে সন্তান রেখেই ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতিতে অ্যাপেন্ডিক্স অস্ত্রোপচার করেন তিনি—যশোর ইবনে সিনা  হাসপাতালে যা যশোরে প্রথম।
চিকিৎসা পরবর্তীকালে মা ও মেয়ে উভয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
খোজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে সেই মায়ের সেই বেবি সুস্থ্যতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছে।

রোগীর স্বামী হুসাইন আহমেদ বলেন,

> “ডা. পান্নু আমাদের জন্য ফেরেশতার মতো এসেছেন। তার দক্ষ হাতে আমার স্ত্রী ও সন্তান—দুজনেই বেঁচে গেছে।”


🔹 চিকিৎসকের বিনয় ও মানবিক দর্শন

নিজের এই সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মাহমুদুল হাসান পান্নু বলেন,

> “চিকিৎসা কেবল পেশা নয়—এটা মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা। আমি চাই সরকারি হাসপাতালে থেকেও মানুষ যেন বিশ্বমানের চিকিৎসা পায়।”


তিনি আরও বলেন,

> “গর্ভে সন্তান রেখে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করা ছিল চ্যালেঞ্জিং। আল্লাহর অশেষ কৃপায় সফল হয়েছি। ভবিষ্যতে আরও উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে চাই।”

🔹 ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ডা. পান্নু জানিয়েছেন, তার লক্ষ্য সরকারি পর্যায়ে আধুনিক ল্যাপারোস্কপিক ও কলোরেক্টাল ক্যান্সার সার্জারির স্থায়ী ইউনিট গড়ে তোলা।
তিনি বিশ্বাস করেন—যথাযথ উদ্যোগে সরকারি হাসপাতালেই সম্ভব উন্নত চিকিৎসা দেওয়া, বেসরকারি খরচ ছাড়াই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments