Tuesday, June 3, 2025
No menu items!
Homeযশোরযশোরে এইডস আক্রান্ত নারীর সিজার সফল, জন্ম নিল পুত্রসন্তান

যশোরে এইডস আক্রান্ত নারীর সিজার সফল, জন্ম নিল পুত্রসন্তান

মানবিক সিদ্ধান্তে ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার, চিকিৎসক দল গোপনে রাখলেন পরিচয়

সচেতনতার নজির গড়ল যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

যশোরে এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত এক নারীর সফল সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার (৩১ মে) যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ওই নারী পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। মা ও নবজাতক উভয়েই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসকরা জানান, সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মানবিক বিবেচনায় অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করা হয়। সাত সদস্যের একটি অভিজ্ঞ মেডিকেল টিম এই অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। এই টিমের নেতৃত্ব দেন গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. জেসমিন সুলতানা।

অস্ত্রোপচার শুরু হয় সকাল ১০টায় এবং সম্পন্ন হয় দুপুর ১২টার দিকে। অপারেশনের পর লেবার ওটি কক্ষটি নিরাপত্তা ও সংক্রমণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, “সিজারিয়ান অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মা ও সন্তান দুজনেই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, “এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এটি আমাদের হাসপাতালে দ্বিতীয় এইডস আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচার।”

তিনি আরও জানান, এই অপারেশনে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে তারা যাতে কোনো ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি না হন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বার ছয় মাসে ওই নারীর বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা যায় সিজার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এইডস আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা সীমিত। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরণের অপারেশনের পর থিয়েটার বন্ধ রাখতে হয় তিন দিন, যা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং রোগীকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নারী আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। শেষপর্যন্ত মানবিক দিক বিবেচনা করে এই জটিল অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্বজনরা জানান, ২০১৮ সালে মনিরামপুর উপজেলার এই নারী অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হন এবং স্থানীয় একটি ক্লিনিকে তার অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকেই তিনি এইডসে আক্রান্ত হন, ধারণা করা হয়, স্বামীর মাধ্যমেই তিনি সংক্রমিত হন। দীর্ঘদিন গোপনে এইডসের চিকিৎসা নেন এবং সেই অবস্থায় তিনি গর্ভবতী হন।

এই ঘটনা শুধু একটি চিকিৎসা নয়, বরং যশোরের চিকিৎসা ব্যবস্থার দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। এটি ভবিষ্যতে চিকিৎসা খাতে সচেতনতা ও সহানুভূতির মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

যশোর টাইমস/এআই

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments