কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলে ঢাকার গাবতলী হাট হয়ে ওঠে দেশের সবচেয়ে বড় পশু মেলা। সেখানে প্রতিবছর নজর কাড়ে কিছু ব্যতিক্রমী, বিশাল আকারের ষাঁড়। এবার সেই দৃষ্টিনন্দন প্রতিযোগিতায় দাপট দেখাতে প্রস্তুত যশোরের মনিরামপুরের খামারি আসমত আলী গাইন-এর পালিত ষাঁড় ‘বাংলার বস-৫’।
৬৫ ইঞ্চি উচ্চতা, ৯৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, প্রায় ৩০ মণ ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের এই কালো দানবাকৃতির ষাঁড়টির জন্য দাম হাঁকানো হচ্ছে ১২ লাখ টাকা। আসমত জানালেন, “গরুটিকে আমি সন্তানের মতো যত্নে বড় করেছি। এবার ১ জুন গাবতলীর হাটে নিয়ে যাচ্ছি, সেখানে এটি সবার নজর কাড়বে আশা করি।”
গাবতলীতে আসমতের রাজত্ব: ‘জলহস্তি’ থেকে ‘বাংলার বস’ পর্যন্ত
আসমত আলী গাইনের নাম গাবতলী হাটে নতুন নয়। তার খামার থেকে গত বছর ‘বাংলার বস-৪’ বিক্রি হয়েছিল ১৫ লাখ টাকায়। এর আগেও তার ষাঁড় ‘জলহস্তি’ এবং ‘বাংলার সম্রাট’ ব্যাপক চমক সৃষ্টি করেছে। এবার ‘বাংলার সম্রাট’-এর ওজন ২৫ মণ, যার দাম ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
রিকশাচালক থেকে সফল খামারি: আসমতের সংগ্রামের গল্প
৩৯ বছর বয়সী আসমতের শুরুটা ছিল কঠিন বাস্তবতায়। একসময় রিকশা চালানো ও বাদাম বিক্রি করতেন। মাত্র দুটি গরু দিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তার খামারে গরুর সংখ্যা ৪৫ থেকে ৬০টি। রয়েছে তিনটি বড় শেড এবং ১৭১ শতক জমি। তার খামারের প্রতিটি ষাঁড়ই বড় করে তোলা হয় সযত্ন পরিচর্যায়।
আসমতের জীবনের আরেক নায়িকা তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। গোয়ালঘর পরিষ্কার, গরুর খাবার তৈরি—সবকিছুতে তার নিরলস সহযোগিতা রয়েছে। প্রতিটি ষাঁড়ের খাবারে প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। খাবারে থাকে খইল, ঘাস, চালের ভাঙা, চিটাগুড় ও ভুট্টার গুঁড়ো।
সহযোগিতা নেই, তবুও এগিয়ে চলা
প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোনো সহায়তা পান না বলে আক্ষেপ করলেন আসমত। “কখনও কোনো কর্মকর্তা আমার খামারে আসেননি,” বলেন তিনি।
এ বিষয়ে মনিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, “লোকবল সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা খামারিদের পাশে থাকার চেষ্টা করি।”
আশা ও প্রত্যাশা
আসমতের বিশ্বাস, সরকারি সহায়তা পেলে দেশীয় ষাঁড় দিয়ে দেশের গরুর মাংসের চাহিদা পূরণ সম্ভব। “দেশি খামারিরাই পারে দেশীয় গরুর উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমাতে,” বললেন তিনি।
এখন দেখার বিষয়, এ বছর গাবতলীর হাটে ‘বাংলার বস-৫’ কত টাকায় বিক্রি হয় এবং দেশের সবচেয়ে দামি ষাঁড়ের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে কিনা।
যশোর টাইমস/এআই