Tuesday, August 12, 2025
No menu items!
Homeআন্তর্জাতিকএকমাত্র ছেলের মৃত্যু, তবুও মায়ের মহৎ সিদ্ধান্তে বাঁচল দুটি প্রাণ

একমাত্র ছেলের মৃত্যু, তবুও মায়ের মহৎ সিদ্ধান্তে বাঁচল দুটি প্রাণ

অসহনীয় শোকের মাঝেও অসাধারণ মানবতার নজির গড়েছেন করাচির এক চিকিৎসক মা। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একমাত্র ছেলের দুটি কিডনি দান করে তিনি নতুন জীবন দিয়েছেন দুই অসুস্থ মানুষকে।

২৩ বছর বয়সী সৈয়দ সুলতান জাফর ছিলেন জিয়াউদ্দিন মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজের এক ডেন্টাল ছাত্র এবং এসআইইউটি-এর কনসালট্যান্ট নেফ্রোলজিস্ট ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেহের আফরোজের একমাত্র পুত্র। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ব্রেন-ডেড হয়ে গেলে, ডা. আফরোজ নিজেই ছেলের অঙ্গ দানের সিদ্ধান্ত নেন এবং মরদেহ নিয়ে যান সিন্ধু ইনস্টিটিউট অব ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লানটেশনে (এসআইইউটি), যেন সময়মতো প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার করাচির একটি প্রাইভেট হাউজিং সোসাইটিতে বন্ধুদের সঙ্গে গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনার শিকার হন সুলতান। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় হাসপাতালে নেয়া হলে দুই দফা মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রথমদিকে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও মঙ্গলবার হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি ঘটে এবং বিকেলে তার সব রিফ্লেক্স নিস্তেজ হয়ে যায়।

অবশেষে সাহসিকতার সঙ্গে মা সিদ্ধান্ত নেন—সুলতানের দুটি কিডনি দান করবেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কিডনি দুটি সফলভাবে দুইজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিসে ছিলেন এবং পরিবারের মধ্যে কোনো দাতা পাচ্ছিলেন না। তবে, উপযুক্ত গ্রহীতা না থাকায় বাকি অঙ্গগুলো ব্যবহৃত হয়নি।

সুলতানের দাদা, খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা. শেরশাহ সাঈদ বলেন, “ডা. মেহের আফরোজ শুধু একজন দক্ষ চিকিৎসক নন, তিনি এক সাহসী মা ও মানবতার প্রতীক। এই দান সমাজের জন্য এক উদাহরণ।”

এসআইইউটি পরিচালক অধ্যাপক আদিব রিজভ বলেন, “এই আত্মত্যাগ শুধু দুটি জীবনকে রক্ষা করেনি, বরং সমাজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—মানবতার শক্তি কতটা অসীম হতে পারে।”

পাকিস্তানে এখনও মৃতদেহ থেকে অঙ্গদানের বিষয়ে নানা ভুল ধারণা ও সামাজিক বাধা রয়েছে। অথচ প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ অঙ্গসংকটের কারণে মৃত্যুর মুখে পড়েন—যাদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো সচেতনতা ও অঙ্গদানের মাধ্যমে।

অধ্যাপক টিপু সুলতান বলেন, “ডা. আফরোজ তার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছেন, এখন তার পাশে কেবল দুই কন্যা। তবু তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।”

শেষ পর্যন্ত সুলতানকে সমাহিত করা হয় কোহি গথে, তার বাবার কবরের পাশেই। আর এই হৃদয়বিদারক অধ্যায়ের মধ্যেও তার মায়ের দয়া, সাহস ও উদারতা হয়ে উঠেছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অপেক্ষায় থাকা অসংখ্য মানুষের জন্য এক নতুন আশার আলো।

যশোর টাইমস/এআই

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments