ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ব্রিটেনের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারকে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দৃঢ়ভাবে চাপ দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডন যাচ্ছেন মাখোঁ। ধারণা করা হচ্ছে, এই সফরকালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি হবে কূটনৈতিক আলোচনার শীর্ষ ইস্যুগুলোর একটি।
মাখোঁর সফরসূচিতে রয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ভাষণ এবং ডাউনিং স্ট্রিটে স্টারমারের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। আলোচনায় উঠে আসবে ইংলিশ চ্যানেল হয়ে অবৈধ অভিবাসন রোধে ‘ওয়ান-ইন, ওয়ান-আউট’ চুক্তির প্রস্তাব, পারমাণবিক শক্তি নিয়ে যৌথ প্রকল্প এবং ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষা বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা।
ফিলিস্তিন নিয়ে মতবিরোধ: এলিসি বনাম ডাউনিং স্ট্রিট
তবে আলোচনার সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে স্বীকৃতির সময় ও পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। উভয় দেশই বলছে, ‘যথোপযুক্ত সময়ে’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কিন্তু সেই সময়-সংজ্ঞা ও কৌশল নিয়ে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
মাখোঁ চান দ্রুত এই প্রক্রিয়া শুরু হোক। ইতোপূর্বে তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা ইসরায়েলের ইরান হামলার কারণে স্থগিত হয়ে যায়। ফ্রান্সের মতে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা মধ্যপ্রাচ্যে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে গতি দেবে।
স্টারমারের দোটানায় যুক্তরাজ্য: প্রতীকী স্বীকৃতি না বাস্তব সমাধান?
ব্রিটিশ সরকারের একাধিক কর্মকর্তা সতর্ক করছেন— যদি স্বীকৃতি কেবল প্রতীকী হয় এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোকে শর্ত সাপেক্ষে চাপে না ফেলা হয়, তবে তা শান্তি প্রক্রিয়ায় কোনো কাজে আসবে না। তাদের মতে, হামাসকে অস্ত্র পরিত্যাগ ও শাসন থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি ছাড়া স্বীকৃতি বিপজ্জনক বার্তা দিতে পারে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে সংযত অবস্থানে রয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা এমন একটি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান চাই, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয় জাতির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। স্বীকৃতি তখনই দেওয়া হবে, যখন তা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে।”
ইসরায়েলের বিরোধিতা ও হামাস ইস্যু
ইসরায়েল বরাবরের মতোই একতরফা স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে। দেশটির মতে, এটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর একপ্রকার ‘হামাসকে পুরস্কৃত’ করার সমতুল্য।
যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাপে স্টারমার
এই আন্তর্জাতিক চাপের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরেও রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন একটি নতুন বামঘেঁষা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিতে পারেন, যারা ফিলিস্তিন ইস্যুতে স্টারমারের চেয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেবে। মাখোঁর চাপ তাই স্টারমারের জন্য কেবল কূটনৈতিক নয়, রাজনৈতিক জটিলতাও তৈরি করতে পারে।
উপসংহার: সফর কূটনীতির নতুন দিগন্ত না সংঘাতের সূচনা?
মাখোঁ-স্টারমার বৈঠকে গাজা যুদ্ধ, ফিলিস্তিন স্বীকৃতি, অভিবাসন এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা একযোগে আলোচনায় আসবে। সফরের ফলাফল কী হবে—তা এখনও অনিশ্চিত। তবে এই সফর মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন মোড় আনতে পারে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।