ইরান ও ইসরায়েলের ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হয়েছে। উভয় দেশই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধের অবসানের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে একটি প্রশ্ন—ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কোথায়?
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা এক সপ্তাহ ধরে খামেনিকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি, এমনকি যুদ্ধকালীন সময়েও তিনি কোনো বার্তা দেননি। এ নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক খামেনির কার্যালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, “মানুষ তাদের সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। খামেনি কোথায়?”—উপস্থাপক জানান, এ প্রশ্নে দর্শকদের অসংখ্য বার্তা এসেছে।
তবে খামেনির আর্কাইভস অফিসের প্রধান মেহদি ফাযায়েলি এর কোনো সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমরা সবাই একসঙ্গে বিজয় উদযাপন করবো। আমাদের উচিৎ প্রার্থনা করা।”
তিনি জানান, সর্বোচ্চ নেতার নিরাপত্তায় নিযুক্ত বাহিনী দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছে। মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি থাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন আরও জানায়, খামেনি বর্তমানে একটি সুরক্ষিত বাঙ্কারে অবস্থান করছেন এবং সম্ভাব্য হত্যাচেষ্টার আশঙ্কায় কোনও ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগও করছেন না।
এদিকে, ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহসেন খালিফেহ বলেন, “এই দীর্ঘ নীরবতা খুবই অস্বাভাবিক ও চিন্তার। খামেনি যদি সত্যিই মারা যান, তবে সেটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় জানাজা।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খামেনির অনুপস্থিতিতে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো কার অনুমোদনে হয়েছে—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত, সামরিক নির্দেশনা ও বিদেশনীতি—সবকিছুতেই খামেনির অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
গুজব আছে, ইসরায়েল এখনো খামেনিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এমন তথ্য দিয়েছেন ইসলামিক রেভ্যলুশনারি গার্ড কোর (IRGC) কমান্ডার ইয়াহিয়া সাফাভির পুত্র হামজেহ সাফাভি। এজন্যই খামেনিকে সম্পূর্ণভাবে জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।
ইরানের জনগণ এখন একটি প্রশ্নেই বিভ্রান্ত—খামেনি কি সত্যিই নিরাপদ ও জীবিত? নাকি এই নীরবতার আড়ালে লুকিয়ে আছে আরেকটি সত্য?