ইসরায়েল তার ইতিহাসে আর কখনোই এত বড় প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি, যতটা হয়েছে ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলায়। তেল আবিবের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যেন গাজা নগরীর প্রতিচ্ছবি। যদিও ইরানও ক্ষতির মুখে পড়েছে, কিন্তু সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানকে পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব। এর পেছনে আছে অন্তত সাতটি কৌশলগত ও প্রাকৃতিক শক্তি, যা দেশটিকে অজেয় করে তুলেছে।
১. হরমুজ প্রণালী: বিশ্ব জ্বালানির রক্তনালী
ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত প্রায় ২০% তেল পরিবাহিত হয়। মাত্র ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত এই জলপথ ঘিরে ইরানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সাতটি কৌশলগত দ্বীপ। এই এলাকা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিতেই আতঙ্কে কেঁপে ওঠে পশ্চিমা শক্তিগুলো।
২. তিন মহাদেশের সংযোগস্থল
ইরান এমন এক অবস্থানে অবস্থিত যেখানে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা মিলিত হয়েছে। এর উত্তর-পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর এবং দক্ষিণে পারস্য ও ওমান উপসাগর। গত ৫০০ বছর ধরে একই সীমানায় টিকে থাকা বিশ্বের অন্যতম পুরনো রাষ্ট্র এটি। বারবার আক্রমণের শিকার হয়েও কখনো পুরোপুরি দখল হয়নি।
৩. ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তি
ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত এবং আধুনিক। ২,০০০ কিমি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েল ও ইউরোপের অংশবিশেষকেও টার্গেট করা সম্ভব। রাশিয়াও ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানি ড্রোন ব্যবহার করে সফল হয়েছে।
৪. পাহাড় আর মরুভূমির দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা
ইরানের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্যতম। পশ্চিমে জাগরোস ও উত্তরে আলবোর্জ পর্বতমালা দেশকে দুর্গের মতো নিরাপত্তা দেয়। এই পাহাড় পার হয়ে কেউ ঢুকলেও সামনে পড়ে লূত মরুভূমি, পৃথিবীর অন্যতম উত্তপ্ত এলাকা, যেখানে সৈন্য বা রসদ পাঠানো প্রায় অসম্ভব।
৫. ভূগর্ভস্থ খনিজ শক্তি
বিশ্বের মোট খনিজ তেলের ১০% এবং গ্যাসের ১৫% রিজার্ভ ইরানে। এই সম্পদ কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত শক্তিও দেয়। তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন, রপ্তানি ও বাজারে প্রভাব বিস্তারে ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
৬. রাশিয়া ও চীনের মিত্রতা
যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার মধ্যেও ইরান রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। যুদ্ধকালীন সময়ে এই দুই পরাশক্তির গোপন ও প্রকাশ্য সমর্থন ইরানকে একটি রাজনৈতিক ঢাল দিয়েছে। এমনকি রুশ গোয়েন্দাদের সাহায্যের আশ্বাসও পাওয়া গেছে ইসরায়েলবিরোধী অভিযানে।
৭. সরাসরি নয়, ছায়াযুদ্ধের মাস্টার
ইরান তার প্রক্সি নেটওয়ার্ক ‘Axis of Resistance’-এর মাধ্যমে ছায়াযুদ্ধে অভ্যস্ত। হামাস, হিজবুল্লাহ, হুথি, ফাতেমিয়ুন ও আল বদর—এই গোষ্ঠীগুলো ইরানের পক্ষ থেকে সরাসরি যুদ্ধ ছাড়াই প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য এই কাঠামো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠছে