ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন্ন জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। আগামী ১৫ থেকে ১৭ জুন কানাডার ক্যানানাসকিসে আয়োজিত এই সম্মেলনে এবার ভারতের কোনো সরকারপ্রধান উপস্থিত থাকবেন না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই প্রথমবারের মতো গত ছয় বছরে জি-৭ সম্মেলনে মোদির অনুপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সম্প্রতি তৈরি হওয়া টানাপোড়েনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কানাডা থেকে এখনও পর্যন্ত মোদিকে কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠানো হয়নি। আয়োজক দেশের এখতিয়ারেই জি-৭-এর বাইরের দেশগুলোর অংশগ্রহণ নির্ধারণ হয়।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির দপ্তর জানিয়েছে, “সময়সময়ে আমন্ত্রিতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।” ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জৈসওয়াল ২২ মে বলেন, “এই বিষয়ে আমার কাছে আপডেট নেই।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সাল থেকে ভারত নিয়মিতভাবে জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে আসছে। তবে এবারের ভিন্নতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খালিস্তান ইস্যুতে কানাডার অবস্থান এবং ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন। ভারত সেই অভিযোগ সরাসরি ‘অযৌক্তিক’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে।
সম্প্রতি কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের মধ্যে টেলিফোনে যোগাযোগ হয়, যা সম্পর্ক স্বাভাবিকের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। তবে এবারের জি-৭ সম্মেলনে ভারতের অনুপস্থিতি সেই আশায় কিছুটা জল ঢেলেছে।
এদিকে কানাডা ইতিমধ্যে জি-৭ এর বাইরের কয়েকটি দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম।
জি-৭ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক শান্তি ও ডিজিটাল রূপান্তর।
বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও, এমন একটি সম্মেলনে মোদির অনুপস্থিতি তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। ভারতের বিরোধী দলগুলো এটিকে ‘আরেকটি কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
অন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছরের মার্চ নাগাদ ভারত জাপানকে পেছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির আসনে পৌঁছাবে। তবুও মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে দেশটি এখনও তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে।
জি-৭ থেকে ভারতের বাদ পড়া কি শুধুই কূটনৈতিক অনাহূত ঘটনা, নাকি ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ইঙ্গিত—তা নিয়েই শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা।