“যে বাবা নয় সন্তান হারান, তার হৃদয় কি আর বাঁচে?”
গাজার খান ইউনুসের চিকিৎসক ডা. হামদি আল-নাজ্জার ইসরায়েলি বিমান হামলায় নয়টি সন্তান হারিয়েছিলেন। কয়েকদিন জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে তিনিও পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।
💔 এক পরিবার, এক কান্না, এক অন্ত্যেষ্টি
২৩ মে গাজার খান ইউনুসে আল-নাজ্জার পরিবারের উপর চালানো এক বর্বর বিমান হামলায় নয়টি শিশু নিহত হয়। সেই একই হামলায় গুরুতর আহত হন পরিবারপ্রধান, ৪০ বছর বয়সী ডা. হামদি আল-নাজ্জার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
তিনি ছিলেন গাজা শহরের নাসের হাসপাতালে দীর্ঘদিনের সেবাদানকারী। একজন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক, যিনি অন্যের জীবন বাঁচাতে দিনরাত কাজ করতেন—অবশেষে হার মানলেন নিজের সন্তানের মৃত্যু ও শরীরের ক্ষতের কাছে।
👩⚕️ একজন মা, একজন চিকিৎসক, একজন বিধ্বস্ত মানুষ
ডা. আলা আল-নাজ্জার, হামদির স্ত্রী এবং পেশায় শিশু চিকিৎসক, সেদিন হাসপাতালের ডিউটিতে ছিলেন। নিজের সন্তানের নিথর দেহ একের পর এক যখন মর্গে এসে পৌঁছায়, তখন এক মায়ের চোখের সামনে গুঁড়িয়ে যায় তার পুরো পৃথিবী।
তিনি বলেন, “আমি যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাজ করছিলাম, তখন বুঝতেও পারিনি যে একে একে আমার নয়টি সন্তান আর স্বামী মৃত্যুর কিনারায়।”
🧒 একটি ছোট্ট প্রাণ এখনও লড়ছে
হামলার পর দুইজন সন্তান বেঁচে ছিল—একজন তাদের ১১ বছরের ছেলে আদাম, এবং আরেকজন ছিলেন হামদি নিজে। দুজনকেই হাসপাতালে নেওয়া হয়। আদাম এখনও বেঁচে আছে, চিকিৎসাধীন অবস্থায়। তবে তার বাবাকে আর বাঁচানো যায়নি।
ডা. হামদির মাথায় ছিল মারাত্মক আঘাত, শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ক্ষত এবং একাধিক হাড় ভেঙে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা সব চেষ্টা করেও তার প্রাণ রক্ষা করতে পারেননি।
🌍 গাজা, এক জ্বলন্ত কবরে পরিণত শহর
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার ভিডিও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুদের পোড়া মরদেহ বের করে আনা হচ্ছে। এই দৃশ্য মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে, স্তব্ধ হয়ে যায় বিশ্ব।
🇮🇹 আন্তর্জাতিক সহানুভূতি, কিন্তু শান্তি এখনও সোনার হরিণ
ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, আদামকে তারা চিকিৎসার জন্য দেশে নিতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে তার মাকেও রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চায়। তবে ডা. আলা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি তার স্বামীর পাশে থেকে তাকে বিদায় জানাতে চান।
এখন সেই বিদায়ও সম্পন্ন হলো। একটি পরিবার ধ্বংস হলো। এক বাবা, এক মা, নয়টি শিশু—সব হারিয়ে গেল এক মুহূর্তে।
⚰️ এই মৃত্যু কেবল একজন চিকিৎসকের নয়
এই মৃত্যু এক অসহায় বাবার, এক বিলুপ্ত স্বপ্নের। যে শহরের মানুষকে বাঁচাতে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, সেই শহরেরই এক রাতে হারিয়ে গেলেন নিজের প্রিয়তম মানুষগুলো—শেষে নিজেও।
গাজার আকাশে প্রতিদিন বৃষ্টি নামে না, নামে আগুন। সেই আগুনেই ছারখার হয়ে গেল আরও একটি পরিবার। ডা. হামদি আল-নাজ্জারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গাজা আরও এক সূর্য হারালো।
🕯️ আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি: ডা. হামদি, আপনার লড়াই ইতিহাসের পাতায় থাকবে।
আপনার সন্তানদের মতো আরও অনেকের জন্য এই যুদ্ধ থামতেই হবে একদিন।
যশোর টাইমস/এআই