ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের কাছে জিম্মি থেকেও ছিলেন সুরক্ষিত এবং নিরাপদ। তবে জিম্মির কিছুদিন পরই মুক্তি পান ২২ বছর বয়সী ইসরায়েলি তরুণী শিয়া শেম।
মুক্তি পাওয়ার পর নিজ বাড়িতে ফিরে এসে এই তরুণী ধর্ষণের শিকার হন। অথচ হামাসের কাছে জিম্মি থাকা অবস্থায় সে ধর্ষণের শিকার হতে পারেন এমন আতঙ্কে ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে নিরাপদে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত নিজ বাসায় এমন ঘটনার শিকার হওয়ার হতবাক হয়েছেন এই তরুণী।
ইসরায়েলের দৈনিক পত্রিকা হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মিয়া পুলিশের কাছে তেল আবিবের একজন সুপরিচিত ফিটনেস ট্রেইনারের বিরুদ্ধে তাকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। মার্চের শেষ দিকে পুলিশ ওই ট্রেইনারকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিষয়টি নিয়ে এতদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হলেও, শেষ পর্যন্ত ওই তরুণী এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন।
গত শনিবার রাতে মিয়া শেম ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল-১২–তে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।
মিয়া বলেন, ‘লুকিয়ে থাকাদের দলে আমি নই, আমি সত্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যেখানে আমার সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা, সেখানেই আমার সঙ্গে এটা ঘটেছে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হন মিয়া শেম। এরপর ওই বছরের নভেম্বর ১০০ জন জিম্মির সঙ্গে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।
মিয়া বলেন, তার জীবনের গল্প নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করার কথা বলে ওই প্রশিক্ষক হলিউডের একজন চলচ্চিত্র প্রযোজকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রথমে ওই প্রশিক্ষক একটি হোটেলের লবিতে প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সেদিন তাদের সঙ্গে সাক্ষাত না হওয়া ওই প্রযোজককে মিয়ার বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মিয়া প্রশিক্ষকের ওই প্রস্তাবে রাজি হন।
প্রযোজকের সঙ্গে সাক্ষাতকারের দিন অ্যাপার্টমেন্টে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুও উপস্থিত ছিলেন। দুই ঘণ্টা দেরিতে প্রশিক্ষক আসেন। এ সময় প্রযোজকের সঙ্গে গোপন বৈঠক হবে উল্লেখ করে মিয়ার বন্ধুকে চলে যেতে বলেন। বন্ধুও বেরিয়ে যান।
মিয়ান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই আমার স্মৃতি ঝাপসা ছিল। শরীরের অনুভূতির সঙ্গে চেতনার সংযোগ ঘটাতে আমার তিন দিন সময় লেগেছে।’ তবে আমার সঙ্গে যা হয়েছে শরীরে তার স্পষ্ট আলামত আছে।
মিয়ার মা কেরেন চ্যানেল-১২–কে বলেন, ‘আমার মেয়ে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। সে জিম্মিদশা থেকে খুবই কঠিন শারীরিক ও মানসিক অবস্থা নিয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু তারপরও তার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। এখন আমি তার মধ্যে যে বিধ্বস্ত অবস্থা দেখছি, তাতে আমি সত্যিই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’
মিয়ার এক বন্ধু বলেন, সম্ভবত তাকে (মিয়া শেম) মাদক দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি পুলিশের কাছে যান এবং পুলিশ তাকে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হয়, এমন একটি সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়।
ওই সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। মিয়া নিজেও এমন সব চিহ্ন দেখেন, যার ব্যাখ্যা খুঁজছিলেন।
তবে অভিযোগের পর পুলিশ ওই প্রশিক্ষককে গ্রেপ্তার করলেও পরে ছেড়ে দেয়। তবে অভিযোগের তদন্ত চলছে।
ওই প্রশিক্ষক অবশ্য মিয়ার সঙ্গে কোনো শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। যদিও পরে তার বক্তব্যে পরিবর্তন এসেছে এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষায় কিছু বিষয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর উত্তর দিয়েছেন তিনি।
মিয়ার এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে কেউ কেউ সমালোচনা করে বলেছেন, রাতারাতি পরিচিতি পেতে তিনি এ কাজ করছেন।
Leave a Reply