দেড় মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে না পারায় ক্রমেই তীব্র হচ্ছে খাদ্যসংকট। এতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে উপত্যকার বাসিন্দাদের। এমন পরিস্থিতিতে প্রোটিনের বিরল উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপ খাওয়ার দিকে ঝুঁকছে হতাশাগ্রস্ত গাজার পরিবারগুলো।
সাধারণত কচ্ছপের মাংস কেটে সেদ্ধ করে পেঁয়াজ, গোলমরিচ, টমেটো এবং মশলার মিশ্রণে রান্না করা হয়। কাঠের আগুন দিয়ে কচ্ছপের মাংস রান্না করছিলেন মাজিদা কানান।
তিনি বলেন, “বাচ্চারা কচ্ছপ দেখলে ভয় পেতো। আমরা তাদের বলেছি, এটি বাছুরের মাংসের মতোই সুস্বাদু। কিন্তু তাদের কেউ কেউ খেলেও অনেকেই তা প্রত্যাখ্যান করে।”
বাস্তুচ্যুত হয়ে অনেকেই এখন দক্ষিণ গাজার বৃহত্তম শহর খান ইউনিসের একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় পুনরায় হামলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে ২ মার্চ থেকে সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল।
গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, “অবরোধই হচ্ছে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের উপায়। এ অবরোধ সরানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত আমাদের নেই।”
এমন অবস্থায় পুষ্টিহীনতার কারণে গাজার পরিস্থিতি দ্রুতই খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ১২টি প্রধান সাহায্য সংস্থার প্রধানরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “গাজায় দুর্ভিক্ষ কেবল একটি ঝুঁকি নয়, সম্ভবত এই অঞ্চলের প্রায় সব অংশেই দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়বে।”
মাজিদা কানান বলেন, “বাজারে কিছুই নেই। আমি যখন ৮০ শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা) দিয়ে সবজির দুটি ছোট ব্যাগ কিনি, তখন আর অন্য কিছু কেনার মতো কোনো টাকা থাকে না।”
সামুদ্রিক কচ্ছপ আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে সুরক্ষিত। কিন্তু গাজায় জেলেদের জালে ধরা পড়া কচ্ছপগুলো খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
‘কচ্ছপ খাওয়ার আশা করিনি’
জেলে আবদেল হালিম বলেন, “আমরা কখনই কচ্ছপ খাওয়ার আশা করিনি। যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন খাদ্যের ঘাটতি ছিল। খাবার ছিল না। তাই কচ্ছপের মাংস প্রোটিনের অন্যান্য উৎসের বিকল্প হিসেবে খাওয়া হতো। মাংস, মুরগি বা সবজি কিছুই ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “কচ্ছপগুলোকে ইসলামিক রীতিনীতি অনুসারে ‘হালাল’ পদ্ধতিতে হত্যা করা হয়েছিল। যদি দুর্ভিক্ষ না থাকত, আমরা এটি খেতাম না এবং ছেড়ে দিতাম।”
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামাসের আক্রমণের ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে গাজা সবচেয়ে গুরুতর মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
এরপর থেকে গাজায় যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মাত্র দুইবার বিরতি হয়েছে। সম্প্রতি ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি এবং ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে এক সপ্তাহের বিরতি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান হানান বালখি গত জুনে বলেছিলেন, গাজার কিছু এলাকায় বাসিন্দারা এতটাই মরিয়া যে, তারা পশুর খাবার, ঘাস এবং পয়ঃনিষ্কাশনের পানি পান করছেন।
বৃহস্পতিবার হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরাইল গাজাবাসীদের বিরুদ্ধে ‘অনাহারকে হাতিয়ার হিসেবে’ ব্যবহার করে সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে।