বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরে গিয়ে ভারতে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করার পরিপ্রেক্ষিতে ‘চিকেন’স নেক’ নামে পরিচিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের সুরক্ষা নিয়ে ভারতে উদ্বেগ দেখা গেছে। সেখানে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই করিডোর ‘চিকেন’স নেক’র নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। ওই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে উন্নত সামরিক অস্ত্র।
পশ্চিমবঙ্গের এই সংকীর্ণ ভূমি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে দেশটির অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করেছে। যেখানে নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান ও চীনের সীমান্ত রয়েছে।
কয়েক দিন আগে চীন সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সাতটি রাজ্য নিয়ে মন্তব্য করেন। সেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশে চীনের সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
ইন্ডিয়া টুডে বলেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী শিলিগুড়ি করিডোরকে নিজেদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে মনে করে। এই পথ ব্যবহার করে সামরিক প্রস্তুতির মাধ্যমে যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুতি রয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর।
করিডোরের পার্শ্ববর্তী সুকনায় দেশটির সামরিক বাহিনীর ত্রিশক্তি করপসের সদরদফতর রয়েছে। এই বাহিনী অঞ্চলটির নিরাপত্তায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ত্রিশক্তি করপস- রাফাল যুদ্ধবিমান, ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত।
দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলেছে, ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য করিডোরের সুরক্ষার বিষয়ে ভারতের অবস্থানকে আরো জোরদার করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার পরিবর্তে চিকেন’স নেককে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে; যেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনী যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য হুমকির ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রসর হতে পারবে।
কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন-
কৌশলগত সতর্কতা
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক হুমকির বিরুদ্ধে ভারত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করছে দিল্লি।
বেইজিংয়ের সাথে ঢাকার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভারতের জন্য কৌশলগত, বিশেষ করে শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তার বিষয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে ভারত ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান সম্প্রতি সামরিক বাহিনী অপারেশনাল প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে উত্তরবঙ্গ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ভারতের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন। সফরে সম্মুখসারির ঘাঁটিগুলো পরিদর্শন ও নিরাপত্তা কৌশল সম্পর্কে সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনাও করেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি
২০১৭ সালে ভুটানের ভূখণ্ডের ডোকলামে চীনা সামরিক বাহিনীর একটি সড়ক নির্মাণ কাজে ভারতীয় বাহিনীর বাধা দেয়ার ঘটনায় ব্যাপক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। সে সময় চিকেন’স নেকের নিরাপত্তার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কারণ ডোকলামের ওই সড়ক ধরে শিলিগুড়ি করিডোরে পৌঁছানোর পথ অনেক সহজ হয়ে যেত।
কিন্তু ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ থেকে পিছু হটে চীনের সেনাবাহিনী। অতীতের এসব ঘটনা থেকে ভারত নিজেদের প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রস্তুতি বাড়িয়ে চলেছে বলে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, উন্নত অস্ত্রশস্ত্র, কৌশলগত মোতায়েন এবং ক্রমাগত সতর্কতার সাথে ভারত যেকোনো বাহ্যিক হুমকির বিরুদ্ধে ‘চিকেন’স নেক’কে শক্তিশালী করেছে। আঞ্চলিক গতিশীলতার পরিবর্তনের সাথে সাথে ভারত এই গুরুত্বপূর্ণ করিডোরের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Leave a Reply