হার্ট অ্যাটাক বা হৃদ্রোগজনিত আক্রমণ (Myocardial Infarction) একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা না পেলে জীবনঘাতী হতে পারে। এটি তখনই ঘটে যখন হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং হৃদপেশির কোষে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। আধুনিক জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, ও মানসিক চাপের কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। তাই এর লক্ষণ ও করণীয় জানা সকলের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণসমূহ
১. বুকে তীব্র ব্যথা
বেশিরভাগ সময় বুকের মাঝখানে বা বা দিকে চাপ বা ভার অনুভব হয়, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে অথবা বারবার আসতে পারে।
২. শ্বাসকষ্ট
হঠাৎ করে দম নিতে কষ্ট হওয়া, যা ব্যথার সঙ্গে অথবা ব্যথা ছাড়াও হতে পারে।
৩. ঘাম হওয়া
ঠান্ডা ঘাম বা অপ্রত্যাশিত ঘাম হওয়া—এটি হার্ট অ্যাটাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
৪. বমি বমি ভাব বা বমি
অনেক সময় হজমের সমস্যা মনে হলেও এটি আসলে হৃদপিণ্ডজনিত জটিলতার লক্ষণ হতে পারে।
৫. ঘাড়, চোয়াল, কাঁধ, অথবা বাহুতে ব্যথা
বিশেষ করে বাম হাতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া হার্ট অ্যাটাকের ক্লাসিক লক্ষণ।
৬. অসামান্য ক্লান্তি বা দুর্বলতা
সাধারণ দৈনন্দিন কাজ করতে অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা।
উচ্চ ঝুঁকির লক্ষণ (বিশেষ সতর্কতা দরকার)
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে
- ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে
- পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা থাকলে
করণীয় (হার্ট অ্যাটাকের সময় করণীয় পদক্ষেপ)
১. শরীরকে বিশ্রামে রাখা
দ্রুত শুয়ে পড়ুন বা বসুন। কোনো রকম হেঁটে চলাফেরা করবেন না।
- চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ
সম্ভব হলে দ্রুত ৯৯৯ বা স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে ফোন করুন। - এসপিরিন গ্রহণ
চিকিৎসকের পরামর্শ থাকলে একটি ৩০০ মি.গ্রা. এসপিরিন চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি রক্ত জমাট বাঁধা রোধে সহায়ক। - CPR প্রয়োগ (প্রয়োজনে)
হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেলে CPR (Cardiopulmonary Resuscitation) প্রয়োগ করতে হবে – তবে প্রশিক্ষিত না হলে পাশে থাকা কাউকে ডাকুন। - অতিরিক্ত উত্তেজনা এড়িয়ে চলা
মানসিক চাপ ও আতঙ্ক যেন না বাড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার পরীক্ষা করে রাখুন। - সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
তাজা ফল, শাকসবজি, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার এবং লবণ-চিনি নিয়ন্ত্রণ করুন। - ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করতে হবে। - ধূমপান ও মাদক বর্জন করুন
এগুলো হৃদরোগের বড় ঝুঁকির উৎস। - মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
মেডিটেশন, ঘুম ও বিনোদনের মাধ্যমে মানসিক শান্তি বজায় রাখুন।
হার্ট অ্যাটাক একটি ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি হলেও এর লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সুস্থ জীবনযাপন হৃদরোগ প্রতিরোধে অন্যতম হাতিয়ার।