‘প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতাম। কিন্তু সোমবার সকালে যেতে পারিনি। আমার ভাই সায়মাকে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মেয়েটি বলেছিল, “আম্মু, স্কুলে যাচ্ছি, টাটা বাই বাই।” বুঝতেই পারিনি, এটাই হবে আমাদের শেষ কথা।’
মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহত সায়মা আক্তারের মা রিনা বেগম।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে ৯ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার প্রাণ হারায়।
সোমবারের ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৭ জন, আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও অন্তত ৭৮ জন।
সায়মার বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিপ্রবর্ধা গ্রামের বাসিন্দা। চাকরির সূত্রে তিনি পরিবারসহ রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করতেন। তিনি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে কর্মরত।
দুর্ঘটনার পর রাত দেড়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সায়মার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় স্থানীয় জামে মসজিদের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সকাল থেকেই শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম। শত শত মানুষ ভিড় করেন নিহত শিশুটির বাড়িতে। আগুনে পুড়ে যাওয়া সায়মার মুখ দেখার পর অনেকে কান্না ধরে রাখতে পারেননি।
সায়মার বড় ভাই সাব্বির হোসেন সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেছেন। ছোট বোনের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘তুই তো আমার কলিজা, আমার জান। প্রতিদিন তোকে নিয়ে স্কুলে যেতাম। এখন আমি একা যাব কাকে নিয়ে? তুই কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলি?’
বিধ্বস্ত বিমানের ঘটনার কথা জানতে পেরে সায়মার বাবা দুশ্চিন্তায় ছুটে বেড়ান বিভিন্ন হাসপাতাল ও জায়গায়। তিনি বলেন, ‘এক বন্ধু ফোন করে জানায়, স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। সারা দিন খুঁজেও মেয়ের কোনো খোঁজ পাইনি। রাত ৮টার দিকে জানতে পারি, সিএমএইচে একটি মরদেহ রয়েছে। গিয়ে দেখি, সেটিই আমার সায়মা। গত রাতেও সে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল, শতবার চুমু খেয়েছিল। কে জানত, সেটাই ছিল শেষবার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়েটা আর কোনোদিন এসে জড়িয়ে ধরবে না—এই কষ্ট আমি কীভাবে সহ্য করব?’
যশোর টাইমস/এআই