গঙ্গাচড়ায় ৮ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, আহত শিশু শিক্ষার্থীসহ অনেকে
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় টানা বৃষ্টির মধ্যেই হঠাৎ আঘাত হেনেছে এক আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়। রবিবার (৫ অক্টোবর) সকালে আলমবিদিতর ও নোহালী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঝড়ে অন্তত ৮ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে আগাম আমন ধান নষ্ট হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
টিনশেড ও আধাপাকা ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হলে টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলো মুহূর্তেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। অনেক গাছ উপড়ে গেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তারা বলেন, “যদি ঝড়টা আরও কয়েক মিনিট স্থায়ী হতো, ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি হতে পারত।”
স্থানীয়দের কান্না ও ক্ষোভ
আলমবিদিতর ইউনিয়নের কুতুব হাজীরহাটের বাসিন্দা নাজমুল আমিন (৩৫) বলেন,
“হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে আমার পাকা ঘর ভেঙে গেছে, টিন উড়ে গেছে। আমার ছেলে মাফি—তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী—মাথায় আঘাত পেয়েছে ও পা ভেঙেছে। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছি।”
নোহালী ইউনিয়নের সরদারপাড়ার ফনি বেওয়া (৪০) বলেন,
“বাবার দুইটা ঘর আছিল, দুইটাই উড়ে গেছে। এখন কোথায় থাকব জানি না।”
স্থানীয় প্রশাসনের হিসাব: দুই ইউনিয়নে ৮ শতাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত
নোহালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান চয়ন বলেন, তাদের ইউনিয়নে প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশাসনের তাৎক্ষণিক সহায়তা
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন,
“ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, ঝড়ে বিপুল পরিমাণ আমন ধান নষ্ট হয়েছে। অনেক কৃষকের জমিতে পানি জমে গেছে, যা ফসলের আরও ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
সহানুভূতির বন্যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ছবি ও ভিডিও ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।